Wednesday, August 10, 2016

শসা চাষ - ৪৫ দিনের মধ্যে লাখপতি

এক সময় কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়ার ফাক্রিকাটা গ্রাামের কৃষক আবুল কালাম মাত্র ২০ শতক জমিতে শসা (ক্ষীরা) চাষ করেই লাখপতি বনে গেছেন। চার সন্তানের জনক আবুল কালাম এক সময় ছোট ব্যবসায়ী ছিলেন। এরপর কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ করেন। গত বছর থেকে শসা চাষেই ভাগ্যের মোড় ফিরে যায় তার। শসা চাষে এ বছর ভাগ্যের চাকার গতি বেড়ে যায় কালামের কয়েক গুণ। এভাবে অনেক কৃষকের ভাগ্য আজ বদলে দিচ্ছে শসা চাষ।

Saki Rahmatullah
Saki Rahmatullah


কৃষিনির্ভর ও ৫ হাজার লোক অধ্যুষিত ফাক্রিকাটা গ্রামের শতকরা ৯৫ জনই কৃষি কাজ করে জীবন চালায়। কালামও ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে কৃষিতে মনোযোগী হন। চাষী আবুল কালাম জানান, গত বছর প্রথমবারের মতো শসা চাষ করে তিনি প্রায় লাখ টাকা আয় করেছেন। ফি বছর লাভ করেছেন তার দ্বিগুণ। ২০ হাজার টাকার খরচে শসা চাষ করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে এ টাকা আয় হয়েছে তার।


তিনি জানান, জমির মালিকের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকায় ২০ শতক জমি লাগিয়ত নিয়ে একই জমিতে বছরে ৩ ধরনের ফসল ফলান তিনি। বৈশাখ মাসে ওই জমিতে প্রথম চাষ করেন কচুর ছড়া। কচুর ফলন তুলে ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহে একই জমিতে শসার বীজ বুনেন তিনি। এ বীজই তার ভাগ্যের দরজা খুলে দেয়। কালাম আরও জানান, শসা চাষের সময় তার খরচ হয় ৪ হাজার টাকার বীজ, ইউরিয়াসহ ৩ বস্তা সার, কীটনাশক, জমি চাষ ও লেবার সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা। ২০ শতক জমিতে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে ৪৫ দিনে ২ লাখ টাকা আয় করেছেন নিজের বুদ্ধিতেই।


শসা ফাল্গুন- বৈশাখ (ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি) মাসে বপন করা হয়। এছাড়া কার্তিক (সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি) মাসে মাঠে বীজ বপন করা যায়। দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে শসা বেশি ভালো হয়।

জমিতে ভালভাবে আড়াআড়িভাবে ৩-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। ২ থেকে ২.৫ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করতে হবে। তবে মাঠে চাষের ক্ষেত্রে মাদার দূরত্ব কিছুটা কম রাখা যেতে পারে। ৪-৫ টি বীজ একটি মাদায় রোপণ করতে হবে। শসা বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচায় এবং সরাসরি মাঠে উৎপাদন করা সম্ভব।

গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে শসা চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

চাষের সময় পরিচর্যা:

নিয়মিত সেচ দিতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং জমিতে আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হবে। বাঁশের মাচা ভালোভাবে বাঁধতে হবে। কৃত্রিম উপায়ে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের সাথে মিশিয়ে দিলে ফলন বেশি হবে এবং উৎপাদন বাড়বে। মাছির আক্রমণ থেকে ফলন রক্ষার জন্য বিষটোপ তৈরি করতে হবে।


লেখা এবং ছবি: কালেক্টেড



No comments:

Post a Comment