Monday, August 22, 2016

ঔষধি গাছের চাষ করে ভাগ্য বদল


নাটোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম খোলাবাড়িয়া। গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে সবুজের সমারোহ। রাস্তার দুই পাশের জমিতে শুধু গাছ আর গাছ। তবে যেন-তেন গাছ নয়। অনেক জটিল রোগ সারানোর ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় এ সব গাছ। গাছের পরিচয়েই খোলাবাড়িয়ার গ্রামটিকে ডাকা হয় ‘ঔষধি গ্রাম’ নামে।



খোলাবাড়ীয়া থেকে হয়ে কাঠালবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তার দুধারে দেখা যায় নানা ধরনের ঔষধি গাছের সমারোহ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘৃত কমল, স্বর্ণ লতা, পাথরকুচি, উলট কম্বল,ঘৃত কৃমারী, শতমুল, মিছরীদানা, তুলশী, থানকুচি, জার্মানীলতা, হরীতকী, বহেরা, আমলকি, চিরতা, তালমাখনা, তেলাকুচি বাসক, তাল মাখনা অশ্বগন্ধা, শিমুল মূল, লজ্জাবতী সাদা লাল, হস্তিগন্ধা, তেজবল, দুধরাজ, নাগেশ্বর,আমরুল, ঘোড়া চান্ডাল, কাল ধুতরা, ঘিয়া বাবলা, লতা কস্তরী, আলকুচি অপরিচিতা, ভুই কুমরাসহ নান প্রজাতির গাছ।

ঔষধি গাছের ওপর খোলাবাড়ীয়া, খামারপাড়া, আমির গঞ্জ, হিসুলী, কাঠালবাড়ীয়া, এতিম মোড়, চৌরী, দক্ষিণপুর, মোল্লার মোড়, বড়বড়িয়া, ইব্রাহীমপুর গ্রামের প্রায় ৮০০ জন চাষি নির্ভরশীল। তারা নানা প্রজাতির ঔষধি গাছের চাষ করে আসছেন প্রায় দুদশক থেকে। 

সিলেট কুমিল্লা ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানথেকে কিছু কিছু লোকজন এসে ঔষধি গাছ কিনে নিয়ে যান। তবে সেটার পরিমাণ বেশি নয়। একারণে স্থানীয় কিছু দরিদ্র লোকজন এ সমস্ত ঔষধি গাছগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফেরি করে বিক্রি করেন। যদি বড় কোন কোম্পানি এখান থেকে ভেষজ গাছগুলো সংগ্রহ করতেন তা হলে চাষিরা উপকৃত হতে পারতেন।


স্থানীয়ভাবে আমিরগঞ্জ বাজারে ঔষধি গাছ প্রক্রিয়া জাত করে বিক্রি করা শুরু হয়েছে। এখানে গড়ে উঠেছে ৮/১০টি দোকান। সমস্ত দোকানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ঔষধি গাছ থেকে গুড়া বা ডাস্ট তৈরি ও প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা শুরু করেছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঔষধি গুন সম্পন্ন পণ্যগুলো পাঠানো সহজ হচ্ছে। চাষিরা ও লাভের মুখ দেখতে পারছেন।


ঔষধি গ্রামটিকে পরিচিত করে তোলার নেপথ্যে রয়েছেন আফাজ উদ্দিন। তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে আফাজ পাগলা নামে পরিচিত।

লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান বাতেন ভুইয়া জানান, ঔষধি গাছের ওপর নির্ভর করেই অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী, পাল্টে ফেলেছেন জীবনযাত্রা। উদ্যোগটি লাভজনক হওয়ায় পার্শবর্তী গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে ঔষধি গাছের চাষ।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ৪০ বছর আগের কথা। খামখেয়ালি প্রকৃতির আফাজ উদ্দিন তার নানির কাছ থেকে ঔষধি গাছের গুণাগুণ জানতে পারেন। এরপর নানা ধরনের ঔষধি গাছের চাষ এবং কবিরাজি চিকিৎসা শুরু করেন। শুধু নিজেই চাষ করে থেমে থাকেননি। অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করেন ঔষধি গাছ লাগাতে। প্রথমে তার কথায় কেউ গুরুত্ব না দিলেও ধীরে ধীরে সবাই বুঝতে পারে এটি খুবই লাভজনক উদ্যোগ। ওই গ্রামের ভেষজ বিক্রেতারা জানান, বহু বছর ধরে আফাজ পাগলার পরামর্শে তারা ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেছেন। এতে তারা অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন।


No comments:

Post a Comment