গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান, কলেজছাত্র আলী হোসেন তার মেধা ও পরিশ্রম করে অসময়ে ভিন্ন জাতের বেগুন চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে হাজারি জাতের বেগুন চাষ করে আট মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। কৃষি ক্ষেত্রে তার এ সাফল্য এলাকার অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে।
অনন্তপুরের অসহায় কৃষক আবদুল কুদ্দুছের ছেলে আলী হোসেন। বাবার অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলা থেকেই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ করে তার বিক্রয়লব্ধ অর্থে নিজের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করে আসছিলেন। এভাবেই শিক্ষা অর্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে আলী হোসেন সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করতে সক্ষম হন। অতিরিক্ত জমি না থাকায় তিনি তার বাড়ির উঠানে পরিত্যক্ত ১৫ শতাংশ জমিতে গত ফেব্রুয়ারিতে হাজারি পিংলা জাতের বেগুন চাষ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং তিনি নিজেই পরিশ্রম করে উন্নত জাতের বেগুন চাষ করায় এতে ফলনও হয় অনেক বেশি। গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উঠানের জমিতে উৎপাদিত ওই বেগুন বিক্রি করেই তার আয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ তার এ জমিতে বেগুন চাষ করতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা। অসময়ে অল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প পরিমাণ জমিতে বেগুন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনের দৃষ্টান্ত তাকে এলাকায় একজন আদর্শ এবং সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত করেছে।
অনন্তপুরের অসহায় কৃষক আবদুল কুদ্দুছের ছেলে আলী হোসেন। বাবার অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলা থেকেই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ করে তার বিক্রয়লব্ধ অর্থে নিজের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করে আসছিলেন। এভাবেই শিক্ষা অর্জন ও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে আলী হোসেন সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করতে সক্ষম হন। অতিরিক্ত জমি না থাকায় তিনি তার বাড়ির উঠানে পরিত্যক্ত ১৫ শতাংশ জমিতে গত ফেব্রুয়ারিতে হাজারি পিংলা জাতের বেগুন চাষ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং তিনি নিজেই পরিশ্রম করে উন্নত জাতের বেগুন চাষ করায় এতে ফলনও হয় অনেক বেশি। গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উঠানের জমিতে উৎপাদিত ওই বেগুন বিক্রি করেই তার আয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ তার এ জমিতে বেগুন চাষ করতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা। অসময়ে অল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প পরিমাণ জমিতে বেগুন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনের দৃষ্টান্ত তাকে এলাকায় একজন আদর্শ এবং সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত করেছে।
সরেজমিনে
পরিদর্শনে দেখা গেছে, আলী হোসেনের চাষকৃত জমিতে বিশেষ জাতের এই বেগুনের গাছগুলো
মাত্র ৪-৫ ফুট লম্বা। ডালপালাগুলো চারদিকে লতার মতো ছড়িয়ে পড়েছে। গাছের প্রতিটি
ডালেই ঝুলে আছে অসংখ্য বেগুন। ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা বেগুনগুলো সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে
এবং তা খেতেও সুস্বাদু। জানা গেল, সেপ্টেম্বরের পরেও আরো দুই মাস গাছ থেকে বেগুন
তোলা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে আলী হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি ফসল উৎপাদন করে
সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে আসছেন। বাবার অভাবের কারণে তিনি বাড়িতে বসে না থেকে
পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে খেত-খামারে কাজ করেন। হাজারি জাতের এ বেগুনটি সাঘাটা উপজেলায়
এই প্রথমবার চাষ করা হয়েছে। তবে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে উৎপাদন ব্যয়
কিছুটা বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, এটুকু জমিতে ধানের চাষ করলে আয় হতো মাত্র ৩ হাজার
টাকা।উল্লেখ্য, মার্চ মাসে যখন জমি থেকে প্রথম বেগুন উত্তোলন করা হয় তখন তা ৪০
টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দাম কমে যাওয়ার পরেও ১০-১২ টাকা পাইকারি দরে ওই বেগুন
বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া এই বেগুনের চাহিদা বাজারে প্রচুর বলে জানা গেছে।
মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুন জন্মে। তবে দোআশ, পলি-দোআশ ও
বেলে-দোআশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।জাত : বাংলাদেশে বিভিন্ন
অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হয়। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারি বেগুন-২
(তারাপুরি), বারি বেগুন-৪ (কাজলা), বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা), বারি
বেগুন-৯ ও বারি বেগুন ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কিছু দেশীয় জাত সারা দেশে বহুদিন থেকে
চাষ করা হচ্ছে। জাতগুলো হলো
ইসলামপুরি, শিংনাথ, খটখটিয়া, ঝুমকা, কাজী ও ভাঙ্গুরা। এসব
ছাড়া লাবণী, শ্রাবণী,বনানী, বারি হাইব্রিড বেগুন-৩ ও বারি হাইব্রিড
বেগুণ-৪ নামের বেশ কিছু হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ হচ্ছে।
বারি বেগুন-১ (উত্তরা) : জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০
থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে।
হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে ৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।
বারি বেগুন-১ (উত্তরা) : জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০
থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে।
হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে ৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।বারি বেগুন-১ (উত্তরা)
: জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল
সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে
৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।বারি বেগুন-২ (তারাপুরী) : এটি একটি
উচ্চফলনশীল সঙ্কর জাত। ১৯৯২ সালে জাতটি অনুমোদন লাভ করে। ফল কালচে-বেগুনি রঙের এবং
বেলুনাকৃতি। এ জাতটি উচ্চফলনশীল। হেক্টরপ্রতি ফলন ৭৫ থেকে ৮৫ মেট্রিক টন। শীতকালে
সারা দেশে চাষযোগ্য।বারি বেগুন-৪ (কাজলা) : সঙ্করায়ণ ও পরে বাছাই প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে উদ্ভাবিত বারি বেগুন-৪ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটি একটি
উচ্চফলনশীল জাত। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মেট্রিক টন। এ জাতের ফলের আকার
মাঝারি লম্বা, রঙ কালচে-বেগুনি। গাছপ্রতি ৭০ থেকে ৮০টি করে ফলন হয়। আশ্বিন
থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা) : বাছাই
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটিও একটি
উচ্চফলনশীল জাত। প্রতি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি করে বেগুন ধরে। প্রতিটি বেগুনের ওজন ১২০
থেকে ১৩০ গ্রাম। অন্যান্য জাতের তুলনায় এটি আগাম ফল দেয়। হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫ থেকে
৫০ টন।বারি বেগুন-৯ : এ জাতটি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
কর্তৃক চাষের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গাছে ৩০ থেকে ৩৫টি ফল ধরে। ফল
ডিম্বাকৃতি, রঙ গাঢ় সবুজ। নিচের দিক সাদাটে দাগ আছে। ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম।
শীতকালে চাষযোগ্য এ জাতের বেগুনের হেক্টরপ্রতি ফলন ৫৫ টন।
বারি
বেগুন-১০ : তাপ সহনশীল হওয়ায় জাতটি সারা বছর চাষ করা যায়। ফল লম্বা আকৃতির।
ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৫৫ মেট্রিক টন।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন : শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য মধ্য
আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। প্রথমে বীজতলায়
ঘন করে বীজ ফেলতে হবে। বীজ গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায়
স্থানান্তর করা বাঞ্ছনীয়। বীজতলায় মাটি ও সমপরিমাণ বালি এবং কম্পোস্ট মিশিয়ে
ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। বীজ বপনের জন্য ৩ বাই ১ বর্গ মিটার মাপের প্রতি
বীজতলায় প্রায় ৮ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
চারা রোপণ : ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের চারা
৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ৬০ সেন্টিমিটার অন্তর রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন
জাতের বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার কম-বেশি হতে
পারে। ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় চারাতে
৫-৬টি পাতা গজায় এবং চারা প্রায় ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। বেগুনের চারার বয়স একটু বেশী
হলেও লাগানো যেতে পারে। চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয সেজন্য চারা তোলার
১-২ ঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান শোষণ করে।
এজন্য বেগুনের সন্তোষজনক উৎপাদন সার ব্যতীত সম্ভব নয়। সারের পরিমাণ মাটির উর্বরতা
শক্তির উপর নির্ভর করে। বেগুন চাষের জন্য হেক্টর প্রতি নিম্ন লিখিত পরিমাণে সার
সুপারিশ করা যেতে পারে। প্রথম কিস্তি সার চারা লাগানোর ১০-২৫ দিন পর, দ্বিতীয়
কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় ফল তোলার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে। জমিতে রস না
থাকলে সার প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা:
বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল
ছিদ্রকারী পোকা। কোন কোন এলাকায় ক্ষুদ্র লাল মাকড় প্রধান শত্রু। এছাড়া কাঁটালে
পোকা বা ইপলাকনা বিট্ল, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, পাতা
মোড়ানো পোকা, থ্রিপস, কাটুই পোকা ইত্যাদি বেগুনের
ক্ষতি করে থাকে। আইপিএম পদ্ধতিতে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
এ দেশে বেগুনের ঢলে পড়া ও গোড়া পচা দু’টি
মারাত্মক রোগ। প্রায় বেগুন ক্ষেতেই এ রোগ দেখা যায়। ফল পচা রোগেও অনেক বেগুন নষ্ট
হয়। বীজতলায় ড্যাম্পিং অফ রোগ চারার মড়ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মোজেইক, ক্ষুদে
পাতা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগও বেগুন ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে
থাকে।
ফল সংগ্রহ ও ফলন:
ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। ফল
যখন পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না তখন ফল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়।
সংগ্রহের সময় ফলের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে থাকবে। অধিক পরিপক্ক হলে ফল সবুজাভ হলুদ
অথবা তামাটে রং ধারণ করে এবং শাঁস শক্ত ও স্পঞ্জের মত হয়ে যায়। অনেকে হাতের আঙুলের
চাপ দিয়ে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুই আঙুলের
সাহায্যে চাপ দিলে যদি বসে যায় এবং চাপ তুলে নিলে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে
হবে বেগুন কচি রয়েছে আর চাপ দিলে যদি নরম অনুভূত হয়, অথচ বসবে না এবং আঙ্গুলের
ছাপ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। বেশী কচি অবস্থায় ফল সিকি ভাগ
সংগ্রহ করলে ফলের গুণ ভাল থাকে, তবে ফলন কম পাওয়া যায়। ফলের
বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিপক্ক পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছানো পর্যন- বেগুন খাওয়ার
উপযুক্ত থাকে। সাধারণতঃ ফুল ফোটার পর ফল পেতে গড়ে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। জাত ভেদে
হেক্টর প্রতি ১৭-৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়।
সরেজমিনে
পরিদর্শনে দেখা গেছে, আলী হোসেনের চাষকৃত জমিতে বিশেষ জাতের এই বেগুনের গাছগুলো
মাত্র ৪-৫ ফুট লম্বা। ডালপালাগুলো চারদিকে লতার মতো ছড়িয়ে পড়েছে। গাছের প্রতিটি
ডালেই ঝুলে আছে অসংখ্য বেগুন। ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা বেগুনগুলো সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে
এবং তা খেতেও সুস্বাদু। জানা গেল, সেপ্টেম্বরের পরেও আরো দুই মাস গাছ থেকে বেগুন
তোলা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে আলী হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি ফসল উৎপাদন করে
সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে আসছেন। বাবার অভাবের কারণে তিনি বাড়িতে বসে না থেকে
পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে খেত-খামারে কাজ করেন। হাজারি জাতের এ বেগুনটি সাঘাটা উপজেলায়
এই প্রথমবার চাষ করা হয়েছে। তবে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে উৎপাদন ব্যয়
কিছুটা বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, এটুকু জমিতে ধানের চাষ করলে আয় হতো মাত্র ৩ হাজার
টাকা।উল্লেখ্য, মার্চ মাসে যখন জমি থেকে প্রথম বেগুন উত্তোলন করা হয় তখন তা ৪০
টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দাম কমে যাওয়ার পরেও ১০-১২ টাকা পাইকারি দরে ওই বেগুন
বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া এই বেগুনের চাহিদা বাজারে প্রচুর বলে জানা গেছে।
মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুন জন্মে। তবে দোআশ, পলি-দোআশ ও বেলে-দোআশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী।জাত : বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হয়। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারি বেগুন-২ (তারাপুরি), বারি বেগুন-৪ (কাজলা), বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা), বারি বেগুন-৯ ও বারি বেগুন ১০ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কিছু দেশীয় জাত সারা দেশে বহুদিন থেকে চাষ করা হচ্ছে। জাতগুলো হলো ইসলামপুরি, শিংনাথ, খটখটিয়া, ঝুমকা, কাজী ও ভাঙ্গুরা। এসব ছাড়া লাবণী, শ্রাবণী,বনানী, বারি হাইব্রিড বেগুন-৩ ও বারি হাইব্রিড বেগুণ-৪ নামের বেশ কিছু হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ হচ্ছে।
বারি বেগুন-১ (উত্তরা) : জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে ৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।
বারি বেগুন-১ (উত্তরা) : জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে ৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।বারি বেগুন-১ (উত্তরা) : জাতটি ১৯৮৫ সালে অনুমোদন লাভ করে। চারা রোপণের ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল ধরে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৬০ থেকে ৬৫ টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।বারি বেগুন-২ (তারাপুরী) : এটি একটি উচ্চফলনশীল সঙ্কর জাত। ১৯৯২ সালে জাতটি অনুমোদন লাভ করে। ফল কালচে-বেগুনি রঙের এবং বেলুনাকৃতি। এ জাতটি উচ্চফলনশীল। হেক্টরপ্রতি ফলন ৭৫ থেকে ৮৫ মেট্রিক টন। শীতকালে সারা দেশে চাষযোগ্য।বারি বেগুন-৪ (কাজলা) : সঙ্করায়ণ ও পরে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত বারি বেগুন-৪ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মেট্রিক টন। এ জাতের ফলের আকার মাঝারি লম্বা, রঙ কালচে-বেগুনি। গাছপ্রতি ৭০ থেকে ৮০টি করে ফলন হয়। আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।বারি বেগুন-৫ (নয়নতারা) : বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন লাভ করে। এটিও একটি উচ্চফলনশীল জাত। প্রতি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি করে বেগুন ধরে। প্রতিটি বেগুনের ওজন ১২০ থেকে ১৩০ গ্রাম। অন্যান্য জাতের তুলনায় এটি আগাম ফল দেয়। হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫ থেকে ৫০ টন।বারি বেগুন-৯ : এ জাতটি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক চাষের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গাছে ৩০ থেকে ৩৫টি ফল ধরে। ফল ডিম্বাকৃতি, রঙ গাঢ় সবুজ। নিচের দিক সাদাটে দাগ আছে। ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম। শীতকালে চাষযোগ্য এ জাতের বেগুনের হেক্টরপ্রতি ফলন ৫৫ টন।
বারি
বেগুন-১০ : তাপ সহনশীল হওয়ায় জাতটি সারা বছর চাষ করা যায়। ফল লম্বা আকৃতির।
ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৫৫ মেট্রিক টন।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন : শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য মধ্য
আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। প্রথমে বীজতলায়
ঘন করে বীজ ফেলতে হবে। বীজ গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায়
স্থানান্তর করা বাঞ্ছনীয়। বীজতলায় মাটি ও সমপরিমাণ বালি এবং কম্পোস্ট মিশিয়ে
ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। বীজ বপনের জন্য ৩ বাই ১ বর্গ মিটার মাপের প্রতি
বীজতলায় প্রায় ৮ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
চারা রোপণ : ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ৬০ সেন্টিমিটার অন্তর রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন জাতের বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার কম-বেশি হতে পারে। ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় চারাতে ৫-৬টি পাতা গজায় এবং চারা প্রায় ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। বেগুনের চারার বয়স একটু বেশী হলেও লাগানো যেতে পারে। চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয সেজন্য চারা তোলার ১-২ ঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
চারা রোপণ : ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ৬০ সেন্টিমিটার অন্তর রোপণ করতে হবে। বিভিন্ন জাতের বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার কম-বেশি হতে পারে। ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এ সময় চারাতে ৫-৬টি পাতা গজায় এবং চারা প্রায় ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। বেগুনের চারার বয়স একটু বেশী হলেও লাগানো যেতে পারে। চারা তোলার সময় যাতে শিকড় নষ্ট না হয সেজন্য চারা তোলার ১-২ ঘন্টা আগে বীজতলায় পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান শোষণ করে।
এজন্য বেগুনের সন্তোষজনক উৎপাদন সার ব্যতীত সম্ভব নয়। সারের পরিমাণ মাটির উর্বরতা
শক্তির উপর নির্ভর করে। বেগুন চাষের জন্য হেক্টর প্রতি নিম্ন লিখিত পরিমাণে সার
সুপারিশ করা যেতে পারে। প্রথম কিস্তি সার চারা লাগানোর ১০-২৫ দিন পর, দ্বিতীয়
কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় ফল তোলার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে। জমিতে রস না
থাকলে সার প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা:
বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। কোন কোন এলাকায় ক্ষুদ্র লাল মাকড় প্রধান শত্রু। এছাড়া কাঁটালে পোকা বা ইপলাকনা বিট্ল, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, থ্রিপস, কাটুই পোকা ইত্যাদি বেগুনের ক্ষতি করে থাকে। আইপিএম পদ্ধতিতে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। কোন কোন এলাকায় ক্ষুদ্র লাল মাকড় প্রধান শত্রু। এছাড়া কাঁটালে পোকা বা ইপলাকনা বিট্ল, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, থ্রিপস, কাটুই পোকা ইত্যাদি বেগুনের ক্ষতি করে থাকে। আইপিএম পদ্ধতিতে এসব পোকা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
এ দেশে বেগুনের ঢলে পড়া ও গোড়া পচা দু’টি মারাত্মক রোগ। প্রায় বেগুন ক্ষেতেই এ রোগ দেখা যায়। ফল পচা রোগেও অনেক বেগুন নষ্ট হয়। বীজতলায় ড্যাম্পিং অফ রোগ চারার মড়ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মোজেইক, ক্ষুদে পাতা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগও বেগুন ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।
এ দেশে বেগুনের ঢলে পড়া ও গোড়া পচা দু’টি মারাত্মক রোগ। প্রায় বেগুন ক্ষেতেই এ রোগ দেখা যায়। ফল পচা রোগেও অনেক বেগুন নষ্ট হয়। বীজতলায় ড্যাম্পিং অফ রোগ চারার মড়ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মোজেইক, ক্ষুদে পাতা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগও বেগুন ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।
ফল সংগ্রহ ও ফলন:
ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। ফল যখন পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না তখন ফল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। সংগ্রহের সময় ফলের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে থাকবে। অধিক পরিপক্ক হলে ফল সবুজাভ হলুদ অথবা তামাটে রং ধারণ করে এবং শাঁস শক্ত ও স্পঞ্জের মত হয়ে যায়। অনেকে হাতের আঙুলের চাপ দিয়ে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুই আঙুলের সাহায্যে চাপ দিলে যদি বসে যায় এবং চাপ তুলে নিলে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে বেগুন কচি রয়েছে আর চাপ দিলে যদি নরম অনুভূত হয়, অথচ বসবে না এবং আঙ্গুলের ছাপ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। বেশী কচি অবস্থায় ফল সিকি ভাগ সংগ্রহ করলে ফলের গুণ ভাল থাকে, তবে ফলন কম পাওয়া যায়। ফলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিপক্ক পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছানো পর্যন- বেগুন খাওয়ার উপযুক্ত থাকে। সাধারণতঃ ফুল ফোটার পর ফল পেতে গড়ে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ১৭-৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়।
ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। ফল যখন পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না তখন ফল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। সংগ্রহের সময় ফলের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে থাকবে। অধিক পরিপক্ক হলে ফল সবুজাভ হলুদ অথবা তামাটে রং ধারণ করে এবং শাঁস শক্ত ও স্পঞ্জের মত হয়ে যায়। অনেকে হাতের আঙুলের চাপ দিয়ে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দুই আঙুলের সাহায্যে চাপ দিলে যদি বসে যায় এবং চাপ তুলে নিলে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে বেগুন কচি রয়েছে আর চাপ দিলে যদি নরম অনুভূত হয়, অথচ বসবে না এবং আঙ্গুলের ছাপ থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। বেশী কচি অবস্থায় ফল সিকি ভাগ সংগ্রহ করলে ফলের গুণ ভাল থাকে, তবে ফলন কম পাওয়া যায়। ফলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিপক্ক পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছানো পর্যন- বেগুন খাওয়ার উপযুক্ত থাকে। সাধারণতঃ ফুল ফোটার পর ফল পেতে গড়ে প্রায় ১ মাস সময় লাগে। জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ১৭-৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment