Monday, August 22, 2016

লেবু চাষ করে টোকাই থেকে কোটিপতি


টাঙ্গাইলের সখীপুরে লেবু বাগান করে অভাবনীয় সাফল্যের নজির গড়েছেন মোছলেম উদ্দিন। সাড়ে ছয় একর জমিতে লেবু বাগান করে প্রতি মাসে তিনি আয় করছেন প্রায় তিন লাখ টাকা।

মোছলেম উদ্দিন এক সময় অন্যের বাড়িতে দিন মজুর হিসেবে কাজ করেছেন। টোকাই ছিলেন অনেকদিন। বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করেছেন কিছুদিন। তার বাড়িতে ছিল ৬টি লেবু গাছ। মাসে প্রায় ৫০০ টাকার লেবু বিক্রি করতেন।


তারপর একদিন সাহস করে সখীপুরের গজারিয়া গ্রামে সাড়ে ছয় একর জমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। সেখানে গড়ে তোলেন লেবু বাগান। তারপর লেবুই তাকে পৌছে দেয় সাফল্যের দরজায়। মোছলেম উদ্দিন বলেন, ৬টি গাছ থেকে আমি শুরু করেছি। এখন আমার বাগান বড় হয়েছে। অন্যের জমি লিজ নিয়ে শুরু করলেও এখন আমার মাসিক আয় তিন লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। মোছলেমের এ সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার অনেক চাষীই। তারা বলেন, তার দেখাদেখি আমরা লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছি। তার সাফল্যকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফায়জুল ইসলাম ভূইয়া ও টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ আবুল হাশিম জানান,তার দেখাদেখি এখানকার অন্য কৃষকরা লেবু চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি কৃষকদের মধ্যে লেবুচাষ ছড়িয়ে দিতে।

-------------চ্যানেল আই ১ ডিসেম্বর, ২০১৫


বাড়ির ছাদেও হতে পারে লেবু চাষ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আব্দুল বাছিত ২০১১ সালে ৭ শতক জমিতে কাগজিলেবুর বাগান গড়ে তোলেন। লেবু বাগানে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করে এক বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেন। প্রথমবার লেবু চাষে লাভের মুখ দেখায় তিনি আরো উৎসাহী হন। গত বছর প্রায় ৭০ শতক জায়গার মধ্যে ২টি লেবু বাগান গড়ে তোলেন। বাগানের প্রতিটি লেবুগাছে ৬০-৮০টি লেবু ধরেছে। তিনজন শ্রমিক গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পাশাপাশি গাছগুলো পরিচর্যা করছেন। চাষি আব্দুল বাছিত নিজেও কাজ করেন বাগানে। তিনি জানান, লেবু চাষ করে ভাগ্য ফেরানো সম্ভব। এর জন্য উদ্যমী ও পরিশ্রমী হতে হবে। বাড়ির ছাদেও লেবু চাষ করতে পারেন। তবে লেবুগাছের চারা কেনার সময় কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারেন। বাড়ির ছাদে টবে লেবু চাষ করে বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করা সম্ভব।

===== বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ ===

বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করতে হলে খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন নেই। তবে নিজের আবাদি জমি থাকলে ভালো। উঠোন কিংবা পরিত্যক্ত জমিতেও শুরু করা যায়। বড় পরিসরে শুরু করতে চাইলে নিজের জমি না থাকলে জমি লিজ নিতে পারেন। সারা দেশের মাটিই চাষাবাদের উপযোগী।
লেবুর জাত
উচ্চ ফলনশীল জাত বারি লেবু ১ ও বারি লেবু ২। পরিচর্যা পেলে বারি লেবু ১ বছরে দুবার ফলন দিলেও বারি লেবু ২ সারা বছর ফলন দেয়। পূর্ণবয়স্ক গাছ ১৫০টি পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।
বারি লেবু ৩ জাতের লেবুর রসের পরিমাণ বেশি। বছরে দুবার ফল পাওয়া যায়।
চাষাবাদ
গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে ২.৫ মিটার দূরে দূরে রোপণ করতে হয়। মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত। প্রতি গাছে টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম, এমপি সার ৪০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম ও গোবর ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। বছরে তিনবার সার দিতে হয়। প্রতিবছর মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক পর্যন্ত গাছের অবাঞ্ছিত শাখা ছাঁটাই করতে হয়। খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দেওয়া দরকার। পানি যাতে না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খরচ ও লাভের হিসাব
পাবনার ঘিওরের লেবু চাষি মজিবুর রহমান ১৬-১৭ বছর ধরে লেবু চাষ করেন। এক বিঘা জমিতে কলম্ব জাতের লেবু চাষে তার খরচ পড়ে প্রায় এক লাখ টাকা। আর বছরে লেবু বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকার। একই গাছ থেকে ১০-১২ বছর লেবু বিক্রি করতে পারেন তিনি। প্রতিবছর বাগান পরিচর্যায় খরচ হয় ১৪-১৫ হাজার টাকা। চাষিরা জানান, চারা বপনের দুই বছর পর লেবু ধরতে শুরু করে। প্রথম দুই বছরেই খরচ উঠে যায়।


No comments:

Post a Comment